২০২৪ সালের ২ অক্টোবর মুক্তির জন্য নির্ধারিত পাকিস্তানি ছবির “দ্য লিজেন্ড অফ মাওলা জট্ট” নিয়ে ভারতে প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) এটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, দাবি করে যে ভারতীয় সেনার লড়াইয়ের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। এমএনএস নেতারা বলছেন, পাকিস্তানি সিনেমা ও অভিনয়শিল্পীদের জন্য এখন ভারতীয় প্রতিভাকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। সংস্কৃতি এবং রাজনীতি একসাথে চললে যদি এ ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়, তবে দর্শকদের সিনেমা নিয়ে চিন্তা-ভাবনাতেও প্রভাব পড়বে, যা সমাজের বিনোদন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
রাজনীতির প্রভাব: কি হতে চলেছে “দ্য লিজেন্ড অফ মৌলা জATT”-এর ভারতের মুক্তিতে?
পাকিস্তানের ব্লকবাস্টার সিনেমা “দ্য লিজেন্ড অফ মৌলা জATT”, যেখানে অভিনয় করেছেন ফওয়াদ খান এবং মাহিরা খান, ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের মুক্তির জন্য নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু এই সিনেমাটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিশেষ করে মহারাষ্ট্র নাভনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখোমুখি। এমএনএস সিনেমার মুক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হুমকি দিয়েছে।
এমএনএস-এর কঠোর বিরোধিতা
এমএনএস, যেটি পাকিস্তানি সিনেমা এবং শিল্পীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধিতা জন্য পরিচিত, আবারো এই সিনেমার মুক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের মতামত প্রকাশ করেছে। এমএনএস সিনেমা শাখার সভাপতি আমেয়া খোপ্কার আনুষ্ঠানিক ভাবে জানান যে, “দ্য লিজেন্ড অফ মৌলা জATT” ভারতের মুক্তি পাওয়া উচিৎ নয়। ANI সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “এই সিনেমা মুক্তি পাবে না। এই সিনেমা ছাড়াও, আমরা পাকিস্তানি সিনেমা বা শিল্পীকে ভারতের মধ্যে গ্রহণ করবো না… যদি এটা হয়, তাহলে শক্তিশালী প্রতিবাদ হবে।”
থিয়েটার মালিকদের উপর হুমকি
খোপ্কার থিয়েটার মালিকদের কাছে একটি কঠোর সতর্কতা পাঠিয়েছেন, সিনেমাটি প্রদর্শন করার বিষয়ে তাঁদের পুনর্বিবেচনা করার জন্য। তিনি বলেন, “থিয়েটার মালিকরা জানে যে, তাদের থিয়েটারের কাঁচ অত্যন্ত দামী… যে কোনো পাকিস্তানি অভিনেতাকে যারা ভারতে আসার সাহস করবে, তাদেরকে মারধর করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “যদিও শিল্প এবং রাজনীতি প্রায়ই আলাদা হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু আমরা পাকিস্তানি সিনেমা ভারতের সৈনিকদের জীবনের দামে হোস্ট করতে সমর্থন করি না।”
ইতিহাসের প্রেক্ষাপট: পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা
“দ্য লিজেন্ড অফ মৌলা জATT” এর মুক্তির উপর বিতর্কটি ভারতীয় বিনোদন জগতে পাকিস্তানি শিল্পীদের ভূমিকা নিয়ে চলমান বিতর্ককে পুনরুজ্জীবিত করে। ২০১৬ সালে উরি সন্ত্রাসবাদী হামলার পর, পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারতীয় সিনেমা এবং শোতে কাজ করার উপর একটি আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা ফওয়াদ খান এবং মাহিরা খানসহ বেশ কয়েকটি প্রখ্যাত পাকিস্তানি অভিনেতার উপর প্রভাব ফেলে। তবে, নভেম্বর ২০২৩ সালে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পাকিস্তানি শিল্পীদের দেশটিতে অভিনয় করা বা কাজ করার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার দাবিকে খারিজ করে।
এখন কি হবে? বাঙালির ঢাকের কাহিনী থেকে কি শিক্ষা নেব?
ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এই প্রেক্ষাপট অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করে। শিল্প এবং রাজনীতির সম্পর্ক, পরিহার্য বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব, এবং স্থানীয় প্রতিভার প্রতি সম্মান – এগুলোর কী আদান-প্রদান? এই পরিস্থিতিতে কী চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আবারো কি ইতিহাসের পাতা থেকে শিক্ষা নেয়া হবে? “দ্য লিজেন্ড অফ মৌলা জATT” এর মুক্তি নিয়ে বিতর্ক নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়, যা শুধু সিনেমা জগতকে নয়, বার্তা ভিতরেও প্রতিধ্বনিত হয়।
শেষ কথা: বিনোদনের রাজনীতির আবহে
আসলে, সিনেমাটি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং সমাজের সংস্কৃতি ও রাজনীতির বন্ধন। আমাদের সময়ের সিনেমার মাধ্যমে অভিব্যক্তি, সৃজনশীলতা এবং শিল্পের দিকগুলো চিন্তা করা জরুরি। বিতর্কগুলো কি চলচ্চিত্র শিল্পের সমাজের নান্দনিকতার বিরুদ্ধে একজন শিল্পী হিসেবে নিজেদের মূল্যায়নে নতুন ছায়া ফেলছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া সময়ের দাবী।