পাঞ্জাব ‘৯৫ সিনেমাটি, মানবাধিকার কর্মী জসওয়ান্ত সিং খালরাকে কেন্দ্র করে, সিবিএফসির সঙ্গে এক বিতর্কিত সংকটে রয়েছে। সিনেমার নাম পরিবর্তনের দাবি ও গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যাবলী কেটে ফেলার ক্ষমতা নিয়ে চলা এই বিতর্ক মানবিক গল্প বলার স্বাধীনতার উপর প্রশ্ন তোলে। খালরার ভূমিকার সত্যতার প্রতি আঘাত হানছে এমন পরিবর্তনগুলি সমাজের ইতিহাসের প্রতি সত্যিকার সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যা এখনকার বলিউডের সংকটকে আরও মাত্রা দিচ্ছে।
বোলিউডের বিতর্কিত চলচ্চিত্র: ‘পাঞ্জাব ‘৯৫’ এবং স্বাধীনতা সংকট
গতকাল বোলিউডের সাম্প্রতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘পাঞ্জাব ‘৯৫’ চলচ্চিত্র, যা মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী জসওয়ান্ত সিং খালরা’র জীবন নিয়ে তৈরি। পরিচালনায় থাকছেন হানি ত্রেহান এবং এই ছবিটি প্রযোজনা করছেন রণি স্ক্রুয়ালা। কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড, অর্থাৎ CBFC, ছবিটি নিয়ে চলছে একাধিক সমালোচনামূলক প্রতিষ্ঠান, যা দেশের স্বাধীনতা এবং ইতিহাসের সঠিক পরিচয়ের উপর বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
প্রথমে, CBFC ছবিটি থেকে ৮৫টি কাটের দাবি তুলেছিল। তবে পরবর্তীতে সংশোধন কমিটির পর্যালোচনার পর, এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১২০টিতে পৌঁছেছে। ছবি নির্মাতাদের দাবি, ছবির এই সাংস্কৃতিক উৎপত্তি এবং সামাজিক প্রভাবের জন্য এটি একটি বড় হুমকি।
নাম পরিবর্তনের চাঞ্চল্যকর দাবি
মিড-ডে-এর এক নতুন প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী জসওয়ান্ত সিং খালরা’র নাম পরিবর্তনের দাবি তুলেছে CBFC। তারা খালরা’র নাম পরিবর্তন করে ‘সুতলেজ’ রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর ফলে ছবির নির্মাতাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে গভীর অসন্তোষ; কারণ তারা মনে করেন, খালরা’র নাম পরিবর্তন করা তার মর্যাদার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করবে।
নির্মাতাদের বক্তব্য, খালরা সিখ সম্প্রদায়ের একজন পূজ্য ব্যক্তিত্ব এবং তার নাম পরিবর্তনের ফলে ছবির আধুনিকতা এবং প্রভাব নষ্ট হবে। তারা দৃঢ়ভাবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
পাঞ্জাব ‘৯৫: সত্য ঘটনাগুলির প্রতিফলন
‘পাঞ্জাব ‘৯৫’ চলচ্চিত্রটি ১৯৯০-এর দশকের অমৃতসর শহরে আবর্তিত হয়, যেখানে এক সাধারণ ব্যাংককর্মী এবং মানবাধিকার কর্মী খালরা’র জীবনাবসানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিটি খালরা’র জীবনের সত্যিকার ঘটনা এবং সত্যকে অনুসন্ধান করে নির্মিত হয়েছে, যেখানে তিনি সিখ যুবকদের নিখোঁজ হওয়া ও হত্যার তদন্তে প্রবেশ করেন।
ছবিতে আরজুন রামপাল এবং সুরিন্দর বিকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। নির্মাতারা ছবির সমাজগত প্রভাব ও সত্যিকার ঘটনাগুলির প্রকাশের উপর জোর দিয়েছে।
সাংস্কৃতিক সংকটের প্রতিফলন ও চলচ্চিত্র শিল্পের দিক
চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে CBFC’র এমন দাবিগুলি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রশ্ন তুলেছে। ছবির প্রযোজকরা বারবার দাবি করেছেন, তাদের কাজটি বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে এবং জনমানুষের জন্য একটি সংবেদনশীল উত্তর দেয়ার উদ্দেশ্যে।
তবে, চলমান সেন্সর প্রক্রিয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং ছবির মুক্তিতে দেরি হচ্ছে। এটি চেতনাশক্তির ইতিহাস নির্মাণে নাটকীয় অতীতের প্রভাব তৈরির একটি উপায়।
বলিউডের বর্তমান অবস্থানের সমালোচনা
বর্তমানে বলিউডের এই সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে ছবি এবং তার শিল্পীদের ওপর রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ তৈরি হচ্ছে। একেকটি নাম পরিবর্তন ও কাটছাঁটের মধ্যে রয়েছে মানুষের অনুভূতি ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অঙ্গীভূতি।
এতে করে প্রশ্ন উঠছে সিনেমা নির্মাতাদের স্বাধীনতা ও সমাজের অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে। ছবির মাধ্যম হতে পারে শক্তিশালী ভাষা, কিন্তু আজকের দিনে ছবির শিল্পের এই সংকটই হয়ত আমাদের চিন্তার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।