জনপ্রিয় নৃত্য পরিচালক জানি মাস্টারের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, যার ফলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২১ বছর বয়সী এক সহকর্মী নারী অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ঘটনাটি চলচ্চিত্র শিল্পের একটি অন্ধকার দিককেই সামনে নিয়ে আসছে, যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ন্যায়বিরোধী আচরণ ক্রমশ বেরিয়ে আসছে। প্রশ্ন উঠছে, সিনেমার গ্ল্যামারের আড়ালে কতটা অন্ধকার লুকিয়ে আছে, এবং কিভাবে এই শিল্পের ভেতরে সংঘটিত অকারণ অত্যাচারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ঘটনা শুধু জানি মাস্টারের নয়, বরং গোটা বলিউডের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
যুদ্ধের সময়ে, যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভারী তরঙ্গ: জ়ানি মাষ্টারের মামলা
জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী জ়ানি মাস্টারকে সম্প্রতি যৌন হেনস্থার অভিযোগের ফলে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগকারী ২১ বছর বয়সী একজন সাবেক সহকর্মীর অভিযোগ, যিনি বলিউডে ‘বাহুবলী’ এবং ‘পুষ্প: দ্য রাইজ’ এর মত ব্লকবাস্টারে কাজ করেছেন। মাস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে শিশুদের সুরক্ষা আইন (POCSO) এর অধীনে অভিযোগ।
যৌন হেনস্থার অভিযোগের দীর্ঘ ইতিহাস
এটি জানা গেছে, অঞ্জলি নামের নারী ২০১৭ সালে জ়ানি মাস্টারের সাথে প্রথম দেখা করেন। দুই বছর পর, তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে মাস্টারের সহকারী হন। তিনি অভিযোগ করেন যে, দীর্ঘ বছর ধরে যৌন নির্যাতন ঘটে, যখন তিনি তখনো শিশু ছিলেন।
একটি নির্দিষ্ট ঘটনার বিবরণ
একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে মুম্বাইয়ের একটি হোটেলে, যেখানে মাস্টার এবং তার দুই পুরুষ নৃত্যশিল্পী একটি শোয়ের জন্য অবস্থান করছিলেন। এই অভিযোগকারী বলেন, মাস্টার তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণের হুমকি দিয়ে অভিযোগ দায়ের করা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন এবং শুটিং ও রিহারসালে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন।
বিবাহ ও ধর্মান্তরিত হওয়ার চাপ
এই অভিযোগগুলি এখানেই শেষ হচ্ছে না। মাস্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি অভিযোগকারীকে তাঁর স্ত্রীর উপস্থিতিতে ধর্মান্তরিত হওয়ার এবং ‘বিয়ে’ করার চাপ দিতে চেষ্টা করেছিলেন। একবার অভিযোগকারী বলেছেন, মাস্টার ও তাঁর স্ত্রী তার ঘরে প্রবেশ করে আক্রমণ করেছেন।
শাস্তি ও আইনি পদক্ষেপ
এই অভিযোগের পর, জ়ানি মাস্টার বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার হন এবং হায়দ্রাবাদে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তেলেগু চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন তাকে তাদের সদস্যপদ থেকে স্থগিত করেছে। তেলেগু ফিল্ম চেম্বারের যৌন হেনস্থার বিষয়ক প্যানেলের চেয়ারপার্সন অভিনেত্রী ঝাঁসি নিশ্চিত করেছেন যে, অভিযোগগুলির মধ্যে ধর্ষণ এবং দমনের অভিযোগ আছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
জ়ানি মাস্টার আসলে অভিনেতা-রাজনীতিবিদ পাওয়ান কল্যাণের জ়ানা সেনা পার্টির সদস্য, যা তাকে সাময়িকভাবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও গুজব উঠেছে যে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে, মাস্টার এই দাবি অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে চলবেন।
শিল্পের ক্ষেত্রে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
জ়ানি মাস্টারের গ্রেফতার ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পে ছড়িয়ে পড়া যৌন নির্যাতনের অভিযোগের মধ্যে পড়ে। কেরালার চলচ্চিত্র শিল্পেও অনেক অভিযোগ উঠেছে, যেখানে শক্তিশালী অভিনেতা এবং নির্মাতাদের নাম উঠে এসেছে। এই অভিযোগগুলি ব্যাপক তদন্ত এবং রাজনৈতিক আলোচনার সূচনা করেছে।
বিকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে একজন নৃত্যশিল্পীর কাহিনি
জ়ানি মাস্টারের বিষয়টি চলচ্চিত্র শিল্পের আরও একটি নাম যুক্ত করেছে, যারা গুরুতর যৌন নির্যাতনের অভিযোগের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। পরিবেশের এই পরিবর্তন স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঘটনার উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ঘটনার মাধ্যমে বলিউডের বর্তমান পরিস্থিতি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে এবং এটি প্রশ্ন তুলে দেয় যে আমাদের শিল্পে কি ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন।