দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যালয়ে ট্যাবের টাকা ঢোকার পর থেকেই পড়ুয়াদের পরীক্ষায় অনুপস্থিতির হার বেড়েছে, যা শিক্ষকদের বক্তব্যে স্পষ্ট। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, সরকারী উদ্যোগের সার্থকতা কতোটা? শিক্ষা ব্যবস্থা কি সত্যিই উন্নতির পথে, নাকি শুধু ভরসার কৃত্রিম প্রতীক? এখানেই সমাজের সত্যিকার চেহারা অত্যন্ত পরিষ্কার – নেতৃত্বের দায়িত্বে অবহেলার খড়গ পড়ছে শিশুদের ভবিষ্যতের উপর।
মল্লভপুরে ট্যাব কেনার পর পরীক্ষায় না দেওয়ার উদ্বেগজনক ঘটনা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লভপুর আদর্শ বিদ্যামন্দিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি উদ্বেগজনক ঘটনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অদূরদর্শিতাকে প্রকাশ করে। সরকারি অর্থের সাহায্যে ট্যাব কেনার পর, স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছে, ১০ থেকে ২৩ শতাংশ ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।
শিক্ষা ব্যবস্থার অস্থিতিশীলতা
এটি কি শুধুমাত্র অর্থের দুর্ভিক্ষ? নাকি সরকারি উদ্যোগের সঠিক বাস্তবায়নের অভাব? এই প্রশ্নগুলো এখন জোরালো ভাবে উঠছে। যখন ট্যাব ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির দিকে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে, তখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভাব আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুতর সংকেত। গুরুরাও বলেছিলেন, ‘শিক্ষা হলো মুক্তি’; কিন্তু এই ঘটনায় আমরা যেন মুক্তির পরিবর্তে অবরুদ্ধতার দিকে ধাবিত হচ্ছি।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের দাবি, ‘টার্গেট’ বিধান কার্যকর হয়নি, যা ট্যাব প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, যে সরকার ট্যাবের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে, তার কর্তৃত্বের কাছে আমাদের শিক্ষার্থীদের অবস্থা কেমন? উত্তর কি কেউ দিতে পারবেন?
রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা
এখন প্রশ্ন হলো, কি রাজনীতিবিদেরা এসব বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ? তারা কি বুঝতে পারেন না যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনীকরণের মানে সকলের জন্য সমান অধিকার নয়, বরং এটি একটি সামাজিক মর্যাদা তৈরি করবে? আসুন, আশা করি আমাদের নেতারা এই বিষয়ে আরও জোরালো চিন্তা এবং কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।
ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজন
মল্লভপুরের এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন কতটা অপরিহার্য। সরকারি স্কুলগুলির জন্য যথাযথ বাজেটের কার্যকর ব্যবহার এবং শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের মাঝে পরামর্শ ও সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।
সত্যি বলতে, ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে; কিন্তু কি শুধুমাত্র ইতিহাসের দোষ? নাকি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্মান ও আত্মবিশ্বাসের অভাব? আমাদের ভাবতে হবে—কীভাবে এই সামাজিক আন্দোলন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারে।
আসুন, পরিবর্তনের ডাক দেই
এখনই পরিবর্তনের সময়। স্থানীয় নাগরিকদের অংশগ্রহণ, শিক্ষকদের উৎসাহ বৃদ্ধি, এবং প্রশাসনিক সমন্বয়—এই সব মিলিয়ে নতুন সমাজ গড়তে পারি, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী হতে পারে সফল যোদ্ধা। আমাদের লক্ষ্য যেন কেবল ফলাফল নয়, বরং পাঠ্যক্রমের বাস্তবায়নে সচেতনতা বৃদ্ধি।
বর্তমান চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, সত্যিই কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা রূপান্তরিত হচ্ছে? নাকি শুধুই নিম্নমুখী যাচ্ছে? তাই, আসুন আমরা সবাই মিলিতভাবে পরিবর্তনের পথে হাঁটতে শুরু করি।