উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি টোটো চালিয়ে সংসার চালান, অসুস্থ স্ত্রী শিবানীকে কলকাতায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাও আবার অ্যাম্বুলেন্স জোগাড়ের অভাবে। এ যেন রাজনীতির বাঁধনহীন অস্থিতিশীলতার সঙ্গী অসহায়তার প্রতীক; যেখানে সাধারণ মানুষের সহজ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন বরাবরই এক নগর কাব্যের মতো। সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কাক্সিক্ষত উন্নয়ন তো বোধ হয় অন্য জগতের গল্প, কিন্তু এই মানুষগুলোর সংগ্রাম যেন আমাদের মানবিক জীবনের আসল গল্প।
কলকাতায় মানবতার চিত্র: অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসায় জরুরি উদ্যোগ
উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, একজন টোটো চালক, তাঁর অসুস্থ স্ত্রী শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসার অভাব নিয়ে যে লড়াই শুরু করেছেন, তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সমস্যা নয় বরং আমাদের সমাজের মানবিকতা ও দায়িত্বের সংকটে একটি চিত্র তুলে ধরে। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার ক্রমবর্ধমান অবনতি শনাক্ত হওয়ার পর, কলকাতায় চিকিৎসার জন্য তিনি রওনা হন। তবে প্রশ্ন হল, আমাদের সমাজ এবং সরকারের মানবিকতা কতটা অবশিষ্ট আছে?
অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে উপেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় একটি অটোরিকশা ভাড়া করার সামর্থ্যও রাখেননি। কিন্তু তিনি সাহস করে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টোটোতে তাঁকে বসিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে, সরকারী নীরবতা ও সমাজের অস্থিরতা মানবতা নিয়ে এক কঠিন প্রশ্ন তৈরি করছে। যদি পরিবারগুলি দুবেলা খাবার জোগাড় করতে পারবে না, তাহলে কি আমরা নিজেদের সভ্য সমাজ হিসেবে দাবি করতে পারি?
প্রশাসনের উদাসীনতা
উপেন্দ্র ও শিবানীর এই কাহিনী একাই নয়, এরকম বহু পরিবার স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক দাবি তোলার ক্ষেত্রে সাহায্যের অভাবে ভুগছে। এখানে একটি বড় প্রশ্ন উঠে আসে—বাংলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কি জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করছে? যে সরকার ভোটের সময় উল্লাসিত হচ্ছে, সেই সরকার কি মানুষের সুস্থতা নিয়ে চিন্তিত?
রাজনৈতিক সংকটের উদ্ভব?
কলকাতার এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে আন্দোলন দেখা যাচ্ছে, তা মানবিকতা এবং নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি আমাদের দায়িত্ব নির্দেশ করে। এই সময় রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে ভোটের মূল্য, কিন্তু স্বাস্থ্যসেবার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে—”একবার আমাদের ভোটের গুরুত্ব বুঝতে পারলে কেন সরকারের উপর নির্ভরশীল হতে হবে?”
জনমত ও ভবিষ্যতের চাওয়া
এই ঘটনার পেছনে কেবল প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা নয়, বরং সমাজের মানবিকতা, আদর্শ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে। উপেন্দ্রর অভিজ্ঞতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকেও আলোকপাত করে। যখন সাধারণ জনগণ সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে কষ্ট পায়, তখন কি সমাজ বা রাষ্ট্রের ভূমিকা আর থাকে?
সমাজ পরিবর্তনের আহবান: নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন
প্রশাসনিক দায়িত্বে জরুরি পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। সরকারের উচিত মানবিকতার পথে আসা, মানুষের সমস্যাগুলি শোনা এবং কার্যকর সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। উপেন্দ্র এবং শিবানী কেবল দুটি নামই নয়, বরং দেশের হাজারো মানুষের চিত্র। সময় এসেছে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করার।