বোলপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে কেষ্টর প্রত্যাবর্তনে, যেন কেন্দ্রীয় সম্রাটের আসনে পুনরাবর্তন। অন্য নেতাদের ছবি গায়েব, কাজল শেখের সমালোচনার অনুরাগে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ক্ষমতার কারাগার। শনিবারের মিলনমেলা যেন গুণগত বৈচিত্র্যের সাথে মধ্যযুগীয় একটি নাটক, যেখানে কর্মী-সমর্থকেরা গলির পথে হেঁটে যাচ্ছেন, অথচ নেতৃত্বের একটা অবসন্ন সুর বাজছে। রাজনীতির এই টানাপোড়েন, মানুষের উপলব্ধির পরিবর্তন, এবং সংঘবদ্ধ সমাজের প্রেম-ব্যথার নাট্যরূপ যেন রবীন্দ্রনাথের কবিতায় হারিয়ে যাচ্ছে।
বোলপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কর্মকাণ্ড
বোলপুরের তৃণমূল কংগ্রেস অফিস আজ নতুন আভা ধারণ করেছে ‘কেষ্ট’ নামক নেতার উপস্থিতিতে। মুকুল রায়, যিনি বর্তমানে ‘কেষ্ট’ হিসেবেই পরিচিত, তাঁর ফেরার পর অফিসে নেতাদের ছবির বদলে মাত্র তাঁর ছবি স্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনাটি তৃণমূলের অন্দরমহলের রাজনৈতিক পরিবেশের একটি সূক্ষ্ম দিক উন্মোচন করে, যেখানে বাহ্যিকভাবে সবকিছু অপরিবর্তিত দেখালেও রাজনৈতিক অবস্থায় গভীর পরিবর্তন ঘটছে।
কাজল শেখের সমালোচনা
এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের অন্য নেতা কাজল শেখ। তিনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই মনোভাবেঅন্যায়ভাবে নেতৃত্বের ভারসাম্যে পরিবর্তন আসছে। জনগণের মনে প্রশ্ন উঠছে, সরকারের এসব পদক্ষেপ বাস্তবে কি জনগণের কল্যাণে অবদান রাখছে কিনা। রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চে একে অপরকে আক্রমণের প্রবণতা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
‘দাদা–ভাই’ মিলন অনুষ্ঠান
এদিকে, শনিবার বিকেলে সেই অফিসে ‘দাদা–ভাই’ ডাকনামের আলোচনাসভায় নেতৃবৃন্দ ও কর্মী সমর্থকরা একত্রিত হন, যেন রাজনীতির সব বিতর্ক ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করেন। এই সমাবেশটি ‘সাদা-কালো’ রাজনীতির পুনর্মিলন ঘটায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, সাধারণ মানুষ এখন বুঝতে পারছে, তাদের আবেগ কোথায় যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় রাজনীতি ও জনমানুষের দৃষ্টিভঙ্গি
সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার আলোচনা তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, অর্থহীন রাজনৈতিক নাটকের ফলে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কি আদৌ কিছু হচ্ছে? কেষ্টকে প্রধান নেতার ছবি হিসেবে তুলে ধরা একটি শক্তিশালী বার্তা, কিন্তু এর পেছনে কি রাজনৈতিক কৌশল বা সমাজের মানুষের ইচ্ছা প্রতিফলিত হচ্ছে? রাজনৈতিক অঙ্গন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
সমাজে পরিবর্তনের লক্ষণ
সমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এখন নেতা-নেত্রীর প্রকৃত কাজকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এই রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধারণ মানুষকে এক নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাচ্ছে – ‘রাজনীতিতে কর্তৃত্ববাদিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, নাকি জনপ্রতিরূপ?’ এই প্রশ্নটি প্রতিটি সভা-সমিতিতে আলোচিত হচ্ছে।
উপসংহার
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা স্মরণ করে বলতে গেলে, ‘অন্যেরা আমাকে বৃক্ষ বলে, আমি নিজে বন অনুভব করি।’ এই উপলব্ধি থেকে যদি ভাবি, তাহলে আমরা কি শুধুমাত্র একটি ছবির ভিত্তিতে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের বিচার করছি? না কি বাস্তবতার মঞ্চে কেষ্টদের আধিপত্যের ফলে আমাদের সমাজ এক বাজার শূন্যতায় নিমজ্জিত হয়েছে, যেখানে মুক্তির কোনো পথ নেই?