নির্যাতিতার বাবার মুখে সঞ্জয়কে চিনতে না পারার ঘটনাটি বিচারকের গম্ভীর আসনের নিচে যে কতটা অন্ধকারের আবরণ ফেলেছে, সে ভাবনা আমাদের আত্মাকে নাড়া দেয়। এর মধ্য দিয়ে গবর্নেন্সের অক্ষমতা, নেতাদের দায়বদ্ধতা আর সমাজের এ বিপন্ন দশা প্রতিফলিত হয়। রাজনৈতিক নাটকের এসব ক্রীড়ানক, একদিকে জনগণের যন্ত্রণা, অন্যদিকে ক্ষমতার খেলার সীমাহীন হাস্যরস, যেন পুরো প্রেক্ষাপটটাই এক ভোঁতা কৌতুক।
আমাদের সমাজের চিত্র: নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য
সম্প্রতি একটি আদালতের শুনানির পর নতুন বিতর্ক ও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, নির্যাতিতার বাবা বলেছেন, তিনি অভিযুক্ত সঞ্জয়কে চিনতেই পারেননি। এই মন্তব্যটি সমাজের বিভিন্ন স্তরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে।
নির্যাতনের ছায়া এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া
যুব সমাজের উপর নির্যাতন ও সন্ত্রাস বৃদ্ধির বিষয়টি বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। কিন্তু আদালতে এই ধরনের মন্তব্য উঠলে তা আমাদের সক্ষমতা ও মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করে। রাষ্ট্রের নীতিমালার জটিলতা এবং প্রশাসনের দুর্বলতার মধ্যে কি আমাদের মানবিকতা অল্পস্বল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?
সঞ্জয়কে চিনতে পারলেন কেন?
নির্যাতিতার বাবার মন্তব্যের গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তিনি বলতে চাচ্ছেন, যিনি তার সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, তার মুখটি স্পষ্ট নয়। আমাদের সমাজের আসল চিত্র কি? প্রশাসনের অক্ষমতা এবং আইনগত বাধাবিপত্তির কারণে, কেন একজন নির্যাতিতার বাবা তার মেয়ের কষ্টের মুখোমুখি হলেও অপরাধীকে চিনতে পারছেন না?
সাংবাদিকতা ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা
এখানে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নির্যাতনের ঘটনার পর সংবাদে তৎকালীন দৃষ্টি আকর্ষিত হয়, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে – আসলে দায়বদ্ধ কে? খামখেয়ালী সাংবাদিকতার মধ্যে কি অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে? সেই বিতর্কের মাঝে জনগণের মনোভাব কতটা বাধাগ্রস্ত?
আমরা কি শিখতে পারছি?
আমাদের নেতাদেরও নতুন প্রেক্ষাপটের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তারা যাতে শুধুমাত্র বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না থেকে, বাস্তব উদাহরণ স্থাপন করে একটি নতুন সমাজ গড়ার প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসেন। তারা কি যুবকদের নিরাপদ রাখতে পারবেন? আমাদের সমাজের উন্নতির জন্য কী পদক্ষেপ নিতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি।
ভবিষ্যতের পথ খোঁজা
নির্যাতিতার প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এসেছে। আমাদের কি ধরনের আইনসভা প্রয়োজন? মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোয় মানুষের সম্মান কতটা রক্ষা হয়েছে? যদি না হয়, তবে কেন সঞ্জয়ের মতো অপরাধীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি অন্ধকারে?
অতএব, সমাজ, প্রশাসন এবং নাগরিকদের মধ্যে সঠিক আলোচনা ও পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। আমরা কি ভবিষ্যতে আমাদের সমাজের একটি নতুন রূপ দেখতে পাব? নাকি এই চেনা অন্ধকারই আমাদের অনুসরণ করবে? এর উত্তর অনুসন্ধান করা আমাদের কর্তব্য।