বাংলার কৃষির স্বনির্ভরতার গর্বে ভাসতে হলেও, আলুর বীজের জন্য পঞ্জাবের শরণাপন্ন হওয়ার দুঃখজনক সত্য আমাদের সামনে। বিধানসভায় যখন দাম বৃদ্ধির প্রশ্ন তুলে হতাশার স্তব্ধতা গড়াচ্ছিল, তখন সরকার স্বপ্ন দেখাচ্ছে নিজস্ব বীজ উৎপাদনের। এই সদিচ্ছার মূলে কী আত্মবিশ্বাস, নাকি রাজনৈতিক আপ্তবাক্য? সময়ের দাবি কি প্রকৃত স্বাধীনতার, নাকি মাত্র হোঁচট খাওয়া আত্মমর্যাদার?
কৃষকের অজানা কষ্ট: বিধানসভায় আলুর দাম ও বীজ উৎপাদনের আলোচনা
বিধানসভায় কৃষি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা চলাকালীন, আলুর দাম বৃদ্ধির সমস্যাটি সামনে আসতেই কৃষকদের মধ্যে এক নতুন আন্দোলনের ঢেউ দেখা যায়। আমাদের বাংলার স্বনির্ভরতা থাকলেও, বর্তমানে পঞ্জাবের ওপর আমাদের নির্ভরতা উদ্বেগজনক। আমরা কি আদৌ নিজেদের আলুর উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো, নাকি আমাদের আত্মসম্মানকে জলেভিজে যেতে হবে?
পঞ্জাবের পরিস্থিতি: কেন আমরা ফিরে তাকাই?
প্রমাণিত হচ্ছে যে আমরা দীর্ঘকাল ধরে পঞ্জাবের প্রতি নির্ভর। তবে, পঞ্জাবের কৃষকদের কাহিনি আমাদের দুঃখজনক সত্য। প্রশ্ন উঠছে, আমাদের কি নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষমতা নেই? রাজ্য সরকারও এখন আলুর বীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। তবে, এই পথে কীভাবে আমরা সাফল্য অর্জন করবো?
সরকারের প্রতিশ্রুতি: কথার ফুলঝুরি বনাম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি
রাজ্য সরকারের প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ ও কৃষকদের উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বক্তৃতার মধ্যে অনেক সময় কথার ফুলঝুরি তৈরি হয়। কৃষকরা বাস্তব পরিবর্তন দেখতে চান। তবে, সেই পরিবর্তন কবে আসবে? রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
মিডিয়ার ভূমিকা: সত্যের সন্ধান
মিডিয়া কৃষকদের কষ্টের কাহিনীগুলো প্রকাশ করে এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ, কৃষি সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মিডিয়া কি সত্যিই কৃষকদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছে, নাকি কৃষি তাঁদের কাছে একটি রাজনৈতিক খেলার সামগ্রী?
জনমত ও পরিবর্তিত সামাজিক চিত্র
বিভিন্ন কৃষক সংগঠন সরকারকে চাপ দিতে শুরু করেছে। তাদের দাবি, ‘আমরা নিজেদের বীজ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করতে চাই।’ সরকার অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে বাধ্য, কিন্তু বাস্তবতায় তারা কতটা কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে? এই সংকট কি আমাদের একত্রিত করবে, নাকি ভেসে যাবে?
সামগ্রিক ভাবনা ও চূড়ান্ত দৃষ্টিভঙ্গি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘বিশ্বে আমার কিছু নাই, তবু আমি কিছু করতে চাই।’ এই চিন্তা এখনও কৃষক সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদি সরকার তাদের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়ায়, তবে তাদের আত্মশ্লাঘা বজায় থাকবে কীভাবে? কৃষির উন্নয়ন কি নতুন অধিকার আন্দোলনের জন্ম দেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।