মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুজোয় ফিরুন’ আহ্বানে যে সার্বিক অসন্তোষ উথ্থিত হলো, তা সমাজের চরম বিপন্নতার এক প্রতিচ্ছবি। উৎসবের জন্যে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার ডাক উপেক্ষা করে, অসংগঠিত জনতার ক্ষোভ ধীরে ধীরে আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন এক অদ্ভুত নাটক, যেখানে নেতারা উৎসবের রঙে গোলমাল খুঁজে বের করছেন, অথচ জনতার ক্ষোভের রং দিনের আলোতে ফুটে উঠছে।
মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান: ‘পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন’
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ‘পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন’ চেতনা ব্যক্ত করেছেন। এই আহ্বান সমাজের একটি বৃহৎ অংশের কাছে ভিন্ন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। পুজোর আনন্দে শহরের ব্যস্ততা কিছুটা কমেছে, তবে জনসাধারণের মধ্যে একটি লুকানো অসন্তোষও প্রতিফলিত হচ্ছে। সরকারি ঘোষণার পাশাপাশি মানুষের চিন্তার মধ্যে বিরোধ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অসন্তোষের প্রতিফলন
মুখ্যমন্ত্রীর এই আহ্বান যখন উচ্চারিত হয়, তখন ‘উৎসবে ফিরে না আসার’ ভাবনাও খোলসা হয়। বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষের মুখে এই সমস্যার প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ছে, যা এখন একটি আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, উৎসবের নামে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে?
রাজনৈতিক বাস্তবতা
এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং সমাজের একটি গভীর সংকটের চিহ্ন। মানবিক সম্পর্ক ও উৎসবের আনন্দ ক্রমশ ব্যবসায়িক হয়ে উঠছে। তথাকথিত ‘সবকিছু ঠিক আছে’ নীতির মাঝে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ফারাক বেড়ে চলেছে। এটাই রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তন।
সাংবাদিকতার ভূমিকা
অপরদিকে, মিডিয়া সমাজের চিন্তা প্রতিফলিত করার দায়িত্ব পালন করছে কি? অনেক ক্ষেত্রে তারা নীরব। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে সাধারণ মানুষের আবেগের কোনো গুরুত্ব থাকে না; বরং রাজনৈতিক নেতাদের কূটনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। জনগণের অবস্থান কখনোই মূলধারার খবর হয় না।
জনতার প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীকে আহ্বান নিয়ে জনগণের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ সমর্থন জানাচ্ছেন, তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ‘উৎসব আসছে, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কী হবে?’ ঐতিহ্য তৈরি করতে যে সংগ্রাম হয়েছে, সে সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে না। ডিজিটাল যুগের পক্ষে পুজোর সময় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান কি কার্যকর হবে?
সমাজের নতুন প্রশ্ন
অতএব, প্রশ্ন হল— আমাদের উৎসবের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা কি শুধুমাত্র নতুন পোশাক বা মিষ্টির দোকানের তাকেই কেন্দ্র করে? নাকি এর পেছনে একটি গভীর কাহিনী রয়েছে? সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির এই পরিবর্তনের সময়ে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে সঠিক উত্তর। যেই উৎসবে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়, সেই উৎসব কি আমাদের ভোটে নতুন বিপ্লবের টনক নড়াতে পারে?