ত্রিধারা সম্মিলনীর দুর্গাপুজো মণ্ডপে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলতে গিয়ে গ্রেফতার ৯ জন। কলকাতা হাইকোর্টের বক্তব্য, পুজো মণ্ডপে এমন স্লোগান অবাঞ্ছিত। কি বিচিত্র যুগ! ধর্মের আবরণের তলে সমাজের সত্যিসত্যি কী ধরের পাণে বাঁধা, সেই প্রশ্ন কেউ জানে না। সময়ের এই বিভীষিকা, যেখানে ধর্মের উচ্চারণও যেন রাজনৈতিক ডিকশনের নাইকো-শব্দ!
দুর্গাপূজার মণ্ডপে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’: কলকাতা হাইকোর্টের বিতর্কিত নির্দেশনা
এই ঘটনাটি ঘটে মাত্র দু’দিন আগে, যখন ত্রিধারা সম্মিলনী দুর্গাপূজার মণ্ডপে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেওয়া হলে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতা হাইকোর্ট পরে জামিন দিতে এসে মন্তব্য করেছে, “কোনো পুজো মণ্ডপে এবং দুর্গাপূজার সার্বিক অনুষ্ঠানে এ ধরনের স্লোগান ঠেকানো যাবে না।” এই নির্দেশনা যেন এক নতুন বিপদের সংকেত দেয়, যা সমাজের মৌলিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বিপজ্জনক পদক্ষেপ এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ত্রিধারা সম্মিলনী বা অন্য কোনো পূজার ক্ষেত্রে, সমাজের ন্যায়ের পক্ষে আওয়াজ তোলার অধিকার কি নিষিদ্ধ করা যায়? জনগণের ভাবনা ও বেদনাকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা কি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর হামলা নয়? হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। আন্দোলনকারী ও সাধারণ জনগণ উভয়েই প্রশ্ন তুলছেন, “আমরা কি সত্যিই এতটা খারাপ অবস্থায় আছি যে ন্যায়দণ্ডের স্লোগানকেও অপমানিত হতে হবে?”
কমিউনিটি বনাম কর্পোরেট পূজা
দুর্গাপূজা একটি সমষ্টিগত উৎসব, যেখানে মানবিকতা ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয়, তবে সেই পূজামণ্ডপে ন্যায়বিচারের কথা বলা যাবে না! এই বিষয়টি আমাদের সমাজে পুজোর মূল ভাবনার ক্ষেত্রে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি, এটি কি আবার একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত? পুজোর কর্মসূচিতে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে চাপা দিচ্ছে কি?
রাজনৈতিক নাটক: আসল অভিনেতা কে?
রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং সংকটের গুণগত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে, রাজনৈতিক নেতারা জনগণের কাছে তাদের আসল মুখোশ উন্মোচনের জন্য নানা নাটক করছেন। সমাজের দায়িত্ব ও নেতৃত্বের এটি কেমন প্রতিনিধিত্ব? রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কি মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস ভুলে গিয়ে নিজস্ব গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে দূরে ঠেলছে?
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সরকার ও আদালত?
এখন প্রশ্ন উঠছে: সরকার ও আদালত এই পরিস্থিতিতে কি সত্যিই কার্যকর ভূমিকা পালন করছে? নাকি তারা নিজেদের স্বার্থেই নাচছে? ন্যায়ের জন্য আওয়াজ তোলার দায়িত্ব কি সমাজের সবার নয়? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিষয়টি যেন শুধুমাত্র ‘সরকারি নাটক’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
একটি পরিবর্তনের অপেক্ষায়
অতএব, আসন্ন দুর্গাপূজি কি আমরা শুধুমাত্র উৎসবের আনন্দে মেতে উঠব? না কি মণ্ডপে দাঁড়িয়ে সত্যের সন্ধানে এগিয়ে আসব? এই প্রশ্ন আজকের সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সামনে। আদালতের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের অধিকার ও ন্যায়ের দাবির আওয়াজ কখনোই স্তিমিত হবে না, এবং কোনো ‘পুজো মণ্ডপ’ তার বাধা হতে পারবে না। পরিবর্তনের বাতাস আসছে, তাই নতুন বাস্তবতার অপেক্ষায় থাকুন।