যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কারণে মদ্যপান ও মাদক সেবনের অভিযোগে অন্ধকারতম দিনগুলোর ছায়া পড়েছে, আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা যেন এক বিচিত্র সুরক্ষা কবচ। সমাজের অভিজাততন্ত্র অঙ্গীকার করে, কিন্তু কবে ফিরবে শুদ্ধতার আলো? নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনমানসে অসন্তোষ—এ যেন কাব্যিক নাটকের এক অনাবিল দৃশ্য।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সংকট: প্রশাসনিক নেতৃত্ব এবং বহিরাগতদের প্রভাব
সম্প্রতিই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেটি পূর্ববর্তী ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অযথা বহিরাগতদের প্রবেশের জন্য সরকারের যে নির্দেশনা ছিল, তা কি কার্যকর হয়েছে? বর্তমান পরিস্থিতি গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণহীনতা আবারো মদ্যপান ও মাদক ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ সৃষ্টি করছে।
শিক্ষা ও নৈতিকতার দ্বন্দ্ব
যখন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নৈতিকতা শেখায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সেখান থেকে ভিন্ন কিছু ঘটে? যাদবপুরের মতো প্রতিষ্ঠানে অন্ধকারে মুখ গুঁজে থাকলে, তা কি শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর, নাকি সমাজের জন্য একটি বৃহত্তর সংকট? সামাজিক মূল্যবোধ ও উচ্চ শিক্ষার আদর্শের মাঝে এই দ্বন্দ্বে আমাদের চিন্তার গভীরতা বিবেচ্য। মেধা ও অসৎ আচরণের এমন মিশ্রণ— এ কি শিক্ষার সঠিক দিক নির্দেশ করে? শিক্ষার দেবতা কি এতে চিন্তিত?
দায়িত্বের অভাবের ক্ষতি
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, কাউন্সিলের হতাশাজনক আচরণ কি ন্যায়সঙ্গত? বাহ্যিক দমনের বদলে কিভাবে দায়িত্বশীলতা বাড়ানো যায়? বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক ও মদজনিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী পদক্ষেপগুলো কি কার্যকরী হবে?
মিডিয়া ও পরিবর্তিত জনমানস
মিডিয়া এই সমস্ত ঘটনাবলি নিয়ে কিভাবে আলোচনা করছে? অর্থহীন সংবাদ ও হুমকির বদলে বাস্তব তথ্য জনগণের আশায়। যখন সংবাদমাধ্যমগুলি তথ্যের পুনর্নবীকরণের পরিবর্তে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যস্ত, তখন জনগণের মধ্যে কীভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়? তথাকথিত ‘মৌলিক অধিকারের’ এই চর্চা কি সত্যিই একটি গেম? জনগণের মনে কি এই ঘটনাগুলি নিয়ে কৌতূহল, নাকি ক্ষোভ কাজ করছে?
নেতৃত্বের নিয়ে সম্ভাবনা
বহিরাগতদের কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র ক্যাম্পাসকে বিপর্যস্ত করছে না, মুক্ত চিন্তার পরিবেশকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই পরিস্থিতিতে নেতাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা জরুরি। নেতৃত্বে কি সাহস আছে নিজেদের সমস্যা সমাধানে? নাকি তারা উন্নত নেতৃত্ব তৈরির সক্ষমতায় অব্যাহত থাকবে? এসব প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভবনার বাস্তবতা সরকারের কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল।
সামাজিক উপাখ্যান ও রাজনৈতিক মাত্রা
যাদবপুরের ওপরে যে কার্যক্রম ঘটছে, তা একটি বৃহৎ সামাজিক সংকটের প্রতিফলন। আমরা সাধারণত সমাজের উর্ধ্বগতির চিত্র দেখতে পাই, কিন্তু অন্ধকার দিকগুলো এড়িয়ে যাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মুখীন সমস্যা এবং সমাজের সঠিক দায়িত্ববোধের অভাবে কি কখনো সমাধান সম্ভব?
উপসংহার: পরিচয়ের সময়
এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছে— আমরা কি সত্যিই পরিবর্তন চাই? না কি আমরা নির্মমতার মাঝে জীবন কাটাতে প্রস্তুত? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আমাদের চেতনা, বিশ্বাস ও রাজনৈতিক আচরণকে নতুন করে সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে। সময় এসেছে নিজেদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার পুনঃপরিচয় করার। রবীন্দ্রনাথের কথায়, “বিশ্ব গড়তে গেলে, নিজেকে গড়তে হয়”। তাই আসুন আমরা নিজেদের আত্মসমীক্ষা করি এবং যে কোনও অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর পথে চলার সংকল্প গ্রহণ করি।