দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা দেওয়ায় রাজ্যের সংস্কৃতি ও অর্থনীতি উভয়েই নতুন আলোয় উদ্ভাসিত। কিন্তু বরাবরের মতো, সরকারি অনুদান ও প্রকল্পের স্রোতেও রাজনৈতিক অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য লুকায়িত। পুজোর আনন্দের মাঝে রাজ্য সরকারের প্রতি প্রশ্ন উঠছে, কোথায় গেলো আমাদের আসল ঐতিহ্য? সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে নেতাদের ‘দুর্গা ভাণ্ডার’ প্রকল্প যেন এক শিল্পকলা, যা কেবল জনগণের চোখে ধুলো ঝোঁকায়।
দুর্গাপুজো: ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ও রাজ্যের অর্থনৈতিক সহায়তা
এই বছরের দুর্গাপুজো কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে যে, এই স্বীকৃতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্যতার শক্তি বাড়াবে এবং বিশ্ব মঞ্চে আমাদের গৌরবকে তুলে ধরবে। এই ঘোষণার পর কলকাতা থেকে গ্রাম বাংলায় দুর্গাপুজোর প্রাণবন্ত আনন্দে মানুষ উন্মাদ হয়ে উঠেছে। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে উল্লাসের মাত্রা বাড়ছে।
রাজ্য সরকারের ‘দুর্গা ভাণ্ডার’ উদ্যোগ
রাজ্য সরকারের ‘দুর্গা ভাণ্ডার’ প্রকল্পটি অনুদান প্রদানের মাধ্যমে নগর ও গ্রামের হাজারও দুর্গাপুজো কমিটিকে সহায়তা করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল অসহায়দের সহায়তা করা, সমাজের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং আমাদের ঐতিহ্যের সৌন্দর্যকে রক্ষা করা। তবে, প্রশ্ন উঠছে: এই অনুদান কি সত্যিই সংস্কৃতির উন্নয়নে সাহায্য করছে, নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে?
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নাকি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি?
রাজনীতির জগতের কারণেই দুর্গাপুজোকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কি একটি সরকার, যা দুর্গাপুজোর গুরুত্ব বোঝে, সেই সরকার কি পরে শুধু ভোটের জন্য এই ঐতিহ্যের কথা বলবে? এমন প্রশ্ন প্রকাশ্যে আসছে। গণতন্ত্রের সঠিক ব্যাখ্যা করা আবশ্যক, নাহলে সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ রাজনৈতিক আলোচনায় চাপা পড়ে যেতে পারে।
জনসাধারণের ধারণার পরিবর্তন
দুর্গাপুজোর প্রতি মানুষের আবেগ অটুট থাকলেও, রাজ্য সরকারের অনুদানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বর্তমান যুব সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করে, যা রাজনৈতিক সচেতনতার ইঙ্গিত করে। বিজেপি কিংবা তৃণমূল কংগ্রেস, সরকারের প্রতি তাদের অসন্তোষ দুর্গাপুজোর আনন্দের মাঝে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক প্রকাশ
এদিকে, মিডিয়া বিষয়টির প্রতি সচেতন হয়ে উঠছে। দুর্গাপুজোর সময় পত্রিকা, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই উৎসবের গৌরবের পাশাপাশি সরকারের দায়িত্ববোধের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। তবে, এটি কি কেবল একটি বাহ্যিক চিত্র? নাকি সরকারের আওতায় আসা কৃষকদের জীবনযাত্রার উন্নতির দিকেও নজর দিচ্ছে?
উপসংহার
নিশ্চিতভাবে, দুর্গাপুজো এবারে রাজ্যের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, কিন্তু আমাদের স্মরণ করতে হবে যে আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ কি নিরাপদে রয়েছেন? রাজনৈতিক পরিকল্পনা আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই দুর্গাপুজোর আনন্দের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতির আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন, যাতে সরকার এই ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে পারে।