ঢাকার উত্তরাতে ধর্মান্ধদের মিছিলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের হিন্দুরা যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। হিজাবের কড়াকড়ি, হিন্দু দোকান থেকে দূরে থাকার আহ্বান—এগুলো কি সমাজের জন্য অশনি সংকেত? রাজনীতির গপ্পোতে, ধর্মীয় গোঁড়ামি যেন আমাদের সংস্কৃতির শিকড়কেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ফেলে দিচ্ছে। মানসিকতার পরিবর্তনের সময় এসেছে, নাকি আমরা শুধুই নতুন নাটকীয়তার অপেক্ষায়?
ঢাকায় সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবেদন
বাংলাদেশে গত তিন দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী সূর্যকে মেঘের আড়ালে ঢেকে দেওয়ার মত। বিশেষ করে, গতকাল ঢাকার উত্তরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী কিছু মুসলিম মৌলবি ঘোষণা করেন, “পূজা হতে দেব না।” এই অবস্থান দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা
এই মিছিলের ফলে বাংলাদেশে হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। মৌলবিদেরা হুমকি দিচ্ছেন, “হিজাব পরে স্কুলে আসতে হবে,” যা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। মানবতা কি এই অত্যাচার এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কিছু বলবে না? সারা দেশে এমন ভয়ানক চাপের মুখে হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব একদিকে শক্তি পেতে পারে, তবে তারা কি সত্যিই এই সমাজে নিরাপদ?
বাণিজ্যে মৌলবাদী মনোভাব
এক মৌলবি প্রশ্ন তুলেছেন, “হিন্দু দোকানে চুল-দাঁড়ি কাটবেন না, মিষ্টি কিনবেন না।” এই দাবি কীভাবে মানবিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্থ করছে? যদি বাণিজ্যই হিন্দু-মুসলিমের একটি সেতু হয়, তবে সে সেতু কেন ভাঙাচোরা হচ্ছে? সমাজের এই বিভাজন নতুন কিছু নয়, তবে যারা এমন অবাস্তব দাবি করেন, তারা ভুলে যান দেশের স্বাধীনতার মৌলিক দর্শন কোথায়।
প্রশাসনের নীরব ভূমিকা
রাজনীতির জগতে কিছু নেতার আচরণ যেন থিয়েটারের নাটক। তাঁরা ধর্মীয় অনুভূতিকে বাজারজাত করে সমাজের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। প্রশাসন কি এমন পরিস্থিতিতে নীরব থেকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকেও হুমকির সম্মুখীন করছেন? নাকি তাদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতার আগুনে অর্ণব করতে চান?
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
জনগণের মনোভাব হয়তো দুর্বল, তবে তাদের কণ্ঠস্বর অত্যন্ত স্পষ্ট। দেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও অপমানের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন শুরু হলে প্রশ্ন উঠবে, আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রয়োজন কেন? এই বিচ্ছিন্নতা কি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাবের পরিচায়ক?
উপসংহার
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আমাদের ভাবিত করছে। এটি যেন রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিতে এক প্রলম্বিত সমালোচনা, যেখানে মানবতা এবং ধর্মের নামেই চলছে সংঘাত। আমাদের সকলের দাবি, ধর্মের নামে যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন কোনও সরকার বা সম্প্রদায় দ্বারা সমর্থিত না হয়। সত্যিকার উন্নতির পথ হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা।