দেশপ্রিয় পার্কের ৮০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমা এবং গুয়াহাটির ১০০ ফুটের মূর্তির ইতিহাসে এবার রানাঘাটের পুজো ক্লাবের মহাসমারোহে যে ১০০ ফুটের মহাকাব্য ফুটে উঠবে, তা যেন সাংস্কৃতিক গভীরতার পরিবর্তে মাত্রাতিরিক্ত গর্জনের প্রতীক। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক খেলার মাঠে এমন কীর্তি, জনতার উন্মাদনাকে আরেকটু অস্থির করবে বৈকি! পাবলিক ডিসকোর্সের আকাশে উড়ছে বিতর্কের ডানা, রাজনীতির অঙ্গনে নাগরিকের ভাবনা হয়ে উঠছে যেন এক বায়বীয় কথাসাহিত্য।
রাজনৈতিক নাটক: রানাঘাটের ৮০ ফুট দুর্গা প্রতিমা
নবমী পুজো উপলক্ষে রানাঘাটের পুজো ক্লাব দ্বারা নির্মিত ৮০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমা রাজনীতির অঙ্গনে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এটি দেশপ্রিয় পার্কের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিমা এবং রানাঘাটের পুজো ক্লাব এটি দাবি করেছে। তবে এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সমাজ, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির অবস্থা কেমন?
প্রতিমার সৌন্দর্যে ভাঙছে সমাজের কাঠামো
রাজনীতির মঞ্চে এই বিশাল প্রতিমা যখন উপস্থিত, তখন প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি এই ‘বড়’ প্রতিমার নির্মাণ সরকারী কোন বার্তা বহন করছে? মনে হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতির সাথেসাথে রাজনৈতিক রণনীতি এবং কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা চলছে। ২০১৫ সালে দেশপ্রিয় পার্কে নির্মিত ৮০ ফুট দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি ২০১৭ সালে অসমের গুয়াহাটিতে ১০০ ফুটের প্রতিমাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রানাঘাটের পুজো ক্লাবের উক্তিটি মনে করিয়ে দেয়— ‘এবার সত্যিটাও বড় হয়ে উঠতে হবে।’
পালাবর নাকি অবসানের চিহ্ন?
রানাঘাটের পুজো ক্লাবের বক্তব্যটি সত্যিই বিভ্রান্তিকর। বড় প্রতিমার নির্মাণ কি সমাজের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ? রাজনৈতিক মৌলিকতা যখন ম্লান, তখন সামাজিক মূল্যবোধের এই ‘বড়’ প্রতিযোগিতা কোথায় থামবে? জনগণের মনে কি এই দৈত্যাকার প্রতিমার আসল স্থান রয়েছে, নাকি এটি রাজনৈতিক নেতাদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য একটি মাধ্যম?
গঠনমূলক চিন্তা না বিভ্রান্তি?
এসব প্রতিমার নির্মাণ ভবিষ্যতে সমাজ ও জনগণের অনুভূতি কিভাবে পরিবর্তন করবে? নেতাদের বক্তব্য এবং সাংবাদিকদের প্রতিবেদন এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের নামে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আমরা কি সত্যিই বুদ্ধিদীপ্ত এবং গঠনমূলক আলোচনা শুরু করতে পারবো?
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার আধিপত্য
রাজনৈতিক দলের চেকারবোর্ড যেন প্রতিমা নির্মাণের সঙ্গে সমান্তরালভাবে মাঠে নেমেছে। তবে সমাজের উদ্দেশ্য কি? মৌলিক চিন্তার পরিবর্তে সাজগোজের পেছনে আমরা কি সত্যিই কিছু শিখতে পারছি? সম্ভবত এই বড় প্রতিমা আমাদের মানবিকতা ও সংবেদনশীলতার দিকে একটি নতুন আলোড়ন তৈরি করবে।
সমাপ্তি, তবে প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই দুর্গা প্রতিমার মাধ্যমে রাজনৈতিক মঞ্চে যা ঘটছে তা কি কেবল ধর্মীয় উপলক্ষে? নাকি আমরা আবার ভালোোর পক্ষে খারাপের বিরুদ্ধে লড়াই করছি? আমাদের অবশ্যই প্রশ্ন তোলার অঙ্গীকার করতে হবে, কারণ প্রশ্নই জ্ঞানের সূচনা।