মূলত ক্ষমতার খেলায়, বিদ্যুতের গতিসূত্রের মতোই, একজন নেতার কর্মকাণ্ডে বোঝা যায় সমাজের অবস্থান। মোদীকে ২০০২ এর দাঙ্গায় দায়ী করা নিয়ে বিতর্ক চললেও, ইতিহাসের এই পাতা যেন ক্রিয়ার পরিণামকেই পুণরাবৃত্তি করছে। সমাজের বিরোধিতা, মতভেদ—সব কিছুর বিপরীতে কিছু প্রভাবশালী এখনও নিজের সুর বদলাতে চায়। কিন্ত সমাজ তো দেখছে, গণতন্ত্রের নাটকে মুখোশের বদলে আসল সম্পর্কের থেকেও বড় বিষয় হলো, সবার করাতের দঁড়ে।
গুজরাটের দাঙ্গা: ইতিহাস এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আলোচনা চলছে গুজরাটের ২০০২ সালে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে। এক ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আপনি কি মনে করেন? মোদী এদিয়ে দায়ী?’ এর প্রতিক্রিয়ায় তথাত রায় মন্তব্য করেন, ‘না, আমি মোদীর ‘নিউটনের তৃতীয় আইন’ উল্লেখ করতে চাই। আমাদের প্রতিটা কাজের ফলাফল এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।’ তবে, গুজরাটের সংঘাতের রাতে কি সত্যিই সেই অর্থে দেখা যায়?
মোদীর নেতৃত্বে গুজরাটের ঘটনাবলির প্রতিফলন
নরেন্দ্র মোদী তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এবং সেই সময়ের ঘটনা নিয়ে আজও রাজনীতিতে আলোচনা চলছে। ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়নের সময় গুজরাটের দাঙ্গার কথা বার বার উঠে আসে। আমরা জানি, সহিংসতার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, কিন্তু কি মোদীকে রাজনৈতিক দায় থেকে মুক্ত করা সম্ভব? নাকি ওই পরিস্থিতিতে নেতার ভূমিকার গুরুত্ব চিরকাল অন্ধকারে চাপা থাকবে?
সমাজের বিভাজন এবং রাজনৈতিক চেতনা
বর্তমান সমাজে মোদী কখনো মহান নেতা, আবার কখনো কঠোর সমালোচনার মুখে। গুজরাটের দাঙ্গার পর বিজেপির আসন বৃদ্ধি এবং মোদীর জনপ্রিয়তা দৃশ্যমান, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই মতভেদ কি সমাজে আসলে কী ধরনের পরিবর্তন আনছে?
মিডিয়ার ভূমিকাঃ সত্যের প্রতিফলন?
মিডিয়ার ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাসক গোষ্ঠীর প্রচারিত তথ্য জনগণের মনে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গুজরাটের সংবাদ পরিবেশন কিভাবে আবেগ এবং ঘটনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল, তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতো: ‘শুধু আমরা সচেতন, অন্যদের জন্য বিবেকের মূল্য নেই’। মিডিয়া কি সত্যের সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে পারে? এই প্রশ্ন রাজনৈতিক আলোচনা আজ মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনতার অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অভিযোজন
আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাধারণ জনগণের অসন্তোষ কোথায় গড়ে উঠছে? তারা কি কেবল আশা নিয়ে দিন গুনছে, নাকি পুরনো স্মৃতির পক্ষে আবার সক্রিয় থাকছে? যখন জাতীয় চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ, তখন শাসক গোষ্ঠীর দায় শুধুমাত্র ভবিষ্যতের চিন্তা করা নয়, বরং অতীতের দায় নিয়েও এগিয়ে আসা।
সমাপ্তি: সভ্যতা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
সবশেষে, প্রশ্ন হলো, এই রাজনৈতিক নাটক কোথায় গিয়ে থামবে? গুজরাটের দাঙ্গা কি সত্যিই কেবল একটি কালো ছায়া? নাকি শাসক এবং শাসিতের সম্পর্কের একটি অশান্তির চিত্র? রাজনৈতিক দায়ভার থাকা উচিত, কিন্তু সেই সঙ্গে জাতীয় সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয় মুছে ফেলার স্বপ্নও থাকতে হবে। এভাবেই, জনগণের কণ্ঠস্বর কি শোনা যাবে?