হাওড়া স্টেশনে কাটিহার এক্সপ্রেসের বাঙ্কে একটি রক্তাক্ত দেহের আবির্ভাব যেন আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকের প্রতিবিম্ব। পরিচয়হীন সৌমিত্রের মৃত্যুর পিছনে রাজনৈতিক হাওয়া বইছে, যেখানে গরিব মানুষের জীবন মূল্যহীন। নিজেদের দোষ চাপানোর খেলায় আমরা কতটা দূরে গেছি, তা আজকের ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো।
হাওড়া স্টেশন: মৃত্যুর আরও একটি কাহিনী
সকাল সাতটার কিছু আগে কাটিহার এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ট্রেনের সঙ্গে উপস্থিত মানুষদের মধ্যে আমি খুঁজছিলাম একটি পরিচয়, কিন্তু যা পেলাম তা ছিল একটি রক্তাক্ত দেহ। সৌমিত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের সামনে তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং আমাদের সমাজের নির্মম সত্যিকারের বাস্তবতা।
মৃত্যুর রহস্য: একটি সাধারণ মানুষের জীবন কাহিনী
জিআরপি সূত্রে জানা গেছে, সৌমিত্রের মৃত্যু রহস্যজনক, কারণ তাঁর কাছে রেলের কোনো টিকিট বা পরিচয়পত্র ছিল না। প্রশ্ন হল, ভারতের রেলযাত্রা কি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য? তাঁকে বালির বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, কেন একজন অভাগা মানুষকে এভাবে প্রাণ হারাতে হলো? আমাদের সভ্যতার মানসিকতা কোথায়, যেখানে পরিচয়ের অভাবে একজনের জীবনও ছিনিয়ে নেওয়া হয়?
শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রোধ
এই ঘটনা সমাজে বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিশ্চয়ই গৃহীত নীতিমালা এবং জনকল্যাণের উন্নয়নে শাসনের ব্যর্থতা লুকিয়ে আছে? বাড়িতে আদর্শের বড় বড় বক্তৃতা হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃত্যু কেন উপেক্ষিত হয়? এটি কি একটি বার্তা, যে রেল স্টেশনে একজনের জীবনের মূল্য অনেক কম?
মিডিয়া: প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর
মিডিয়া এই কাহিনিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু কী ধরনের সংবাদ আমরা পাচ্ছি? জনগণ যেন ভয়াবহতার কাছে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। সঠিক তথ্য না পাওয়া কী আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে? সাংবাদিকদের উচিত এই বিষয়ে ভাবা, কারণ প্রশ্নটি এই নয় যে তারা কী জিজ্ঞেস করছেন, বরং তারা সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরতে পারছেন কি না।
পরিবারের আশা ও প্রত্যাশা
অটোস্টপের নাম শুনে কি প্রাণ ফিরে পাওয়া সম্ভব? সৌমিত্রের পরিবার আজ গভীর শোকে্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান কি তাদের পূরণ করবে? সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য আমাদের একত্রিত হতে হবে। সবাই মিলে দাঁড়ালে হয়তো আমরা একটি শক্তিশালী দাবী বুনতে পারব – যে আমরা আর মৃত্যুর শিকার হতে রাজি নই।
এটি শুধু একটি মৃত্যু নয়, বরং এটি আমাদের চেতনারও একটি বড় প্রশ্ন। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, কি আমাদের সত্যিই প্রতিবাদ করতে হবে? নাকি আমরা মৃতের শোকের ছায়ায় আত্মসমর্পণ করব?