ডাক্তার নাকি ‘গুন্ডা’? এই প্রশ্নের চক্করে ৫৯ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জন ডাক্তারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের সৎ উদ্যেশ্য পদে পদে অপমানিত হয়ে গভীর শঙ্কা জাগাচ্ছে আমাদের সমাজে। মানবতা, কি আজকের রাজনীতির উঠতি বর্বরতার কাছে পরাজিত?
কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নাটকীয় পরিস্থিতি: ডাক্তার না গুন্ডা?
কলকাতা: একটি শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনায়, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৫৯ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’ বা ভয়ঙ্কর হুমকির সংস্কৃতির অভিযোগ উঠেছে। যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তা চিকিৎসা পেশার গৌরবের ওপর একটি মেঘের ছায়া ফেলতে পারে।
পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার সংঘাত
পেশাদারিত্বের সাথে নৈতিকতার সংঘাতে অসঙ্গতি ঘটতেই পারে। আধুনিক ভারতে চিকিৎসকদের মধ্যে গুন্ডামির ছায়া দেখা দিলে, দিনটা আসবে যখন চিকিৎসা ব্যবসা প্রচুর মূল্যবান হয়ে উঠবে এবং মানুষ নিজেদের জীবনকে ‘টিকিট’ হিসেবে দেখতে ব্যস্ত হবে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় চিকিৎসকরা যেভাবে মানুষের কল্যাণে সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আজ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
চিকিৎসা সেবায় জনসম্মানের হানী
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তাৎপর্য কী? যদি সত্যিই তাদের কার্যকলাপ নগণ্যতা ও দুর্ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষিত থাকবে কিনা? যদি চিকিৎসকরা জীবন রক্ষার পরিবর্তে গুন্ডাদের মতো আচরণ শুরু করেন, তাহলে তাদের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে পারে।
সরকারি পদক্ষেপ: কার্যকর হবে কিনা?
সরকার ইতিমধ্যে ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, যেখানে ১০ জন চিকিৎসককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই পদক্ষেপ সত্যিই কার্যকর হবে কী? নাকি এটি কেবলমাত্র একটি শাস্তির আদেশ, যা প্রকৃত সমস্যার ওপর একটি আচ্ছাদন সৃষ্টি করবে? অনেকের মতে, সমাধানের ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার অভাবই বর্তমান পরিস্থিতির কারণ।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও মিডিয়ার ভূমিকা
এদিকে, জনগণের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে। কেউ মনে করছেন চিকিৎসকরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন, আবার অনেকে ঘটনার গভীরতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করছেন। মিডিয়া যদি পরিস্থিতির সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে, তবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
সমাজের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
সবশেষে, প্রশ্ন রয়েছে, গণতান্ত্রিক সমাজে কি সত্যিই নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার সম্ভব? ডাক্তার ও গুন্ডার মধ্যে বিভেদ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে। আমাদের উচিত, আমরা কীভাবে আমাদের সমাজে পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা রক্ষা করতে পারি, সেই বিষয়ে চিন্তা করা।