সাগরদিঘি, বক্রেশ্বর থেকে কোলাঘাট—এই পাঁচটি আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাহিনী যেন শক্তির অতলজলে ডুব দেওয়া প্রহেলিকা। নতুন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর সঙ্গে পিপিপি মডেল যুগের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রশাসনের মহৎ উদ্দেশ্যের বাণী যেন শ্রোতাদের কাছে যায়, অথচ চিন্তার গভীরতা কোথাও হারিয়ে যায়। সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যাটের ঘোষণায় এই উন্নয়ন আগামীর দীপ্তি এনে দেবে কিনা, প্রশ্ন তোলা জরুরি। নেতাদের কুর্সির খালাসি নয়, সমাজের চাহিদার প্রতি দায়বদ্ধতা নয় কি?
পূর্ব ভারতে বিদ্যুতের নতুন দিগন্ত: সাগরদিঘি থেকে কোলাঘাট
পূর্ব ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। সাগরদিঘি, বক্রেশ্বর, দুর্গাপুর, সাঁওতালডিহি, ব্যান্ডেল এবং কোলাঘাট—এই পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চারটি নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট। এর মধ্যে একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে নির্মাণ করা হবে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে গতানুগতিক ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করবে। এই ‘সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’ পূর্ব ভারতে প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হচ্ছে।
পটভূমি: বিদ্যুতের রাজনীতির খেলা
এই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্ররা শুধু পাওয়ার উৎপাদন কেন্দ্র নয়, বরং তারা রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও একটি প্রতিনিধিত্ব করছে। সরকারের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি পূর্ব ভারতে দীর্ঘকালীন বিদ্যমান সমস্যা গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। তবে, প্রকল্পগুলোর বিনিয়োগের ফলে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
জনসাধারণের মতামত এবং সরকারী প্রতিশ্রুতির ফাঁক
লোকজন এখন জানতে চাইছেন, এই নতুন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলির সুবিধা কবে তারা পাবেন? রাজ্যে বিদ্যুতের সহজ ব্যবহারের অধিকার নিয়ে তাদের উদ্বেগ অমূলক নয়, বিশেষ করে বর্তমান শীতল আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে।
রাজনৈতিক পরিবেশ এবং অবহেলা
সরকারী পদক্ষেপের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। অনেকে বলছেন, এটি কেবল সরকারের প্রচারণার একটি অংশ। কিন্তু মূল সমস্যাগুলোর সমাধানে তারা কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে অক্ষম। বিদ্যুতের অসম বিতরণ এবং দুর্বল সৌরশক্তির নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর আগমন শুধুমাত্র কিছুটা পরিবর্তন আনবে, বরং দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রেও কিছুটা স্বচ্ছতা আনতে পারে।
জনমত: আশা না নিরাশ?
পাম্পেড স্টোরেজ বা ফসিল ফুয়েল নিয়ে জনমত বিভক্ত। অনেকেই বলছেন, “এটা আমাদের প্রয়োজন; আমাদের বিদ্যুতের নিশ্চয়তা প্রয়োজন।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “এই ব্যবস্থা প্রকৃতি ও সমাজের ওপর অত্যাচার।” ফলে, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভেদ স্পষ্ট হচ্ছে। পূর্ব ভারতে সাধারণ মানুষের অবস্থান ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে।
একটি নতুন সূর্যের প্রতীক্ষায়
এই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এমন একটি সময়ে আসছে, যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে আলোচনার প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এগুলি মানুষের জীবনে কী প্রভাব ফেলবে, সেটাও লক্ষ্য করা হবে। পরিবর্তন চাইলে আমাদের বিদ্যুতের ব্যবহার ও সরকারী নীতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
সত্যিই কি এই ‘সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট’গুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ হবে, নাকি সরকারের হাত থেকে আমাদের জীবনযাত্রার চাপ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা প্রয়োজন।