গত মাসে পীযূষ হালদারের র্যানিংস্টুডেন্ট হিসেবে ওপেন সেক্রেটের খ্যাতি পাওয়া ঘটনা, সত্যিই আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে একটি নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের দ্বারা মারধরের এই কাহিনি, যেন এক অশুভ নাটকের স্ক্রিপ্ট, যেখানে নেতারা নিজেদের ছাত্রদের মানসিকতার সার্বিক গতিপ্রকৃতি বুঝতে অথবা নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের বদলে ক্ষয়িষ্ণু মানবিকতাকে তুলে ধরেছে। এ যেন এক উপমহাদেশের নিখুঁত জঘন্য ছবি, যেখানে শান্তিপূর্ণ ছাত্র সমাজের স্পৃহা এবং সামাজিক নৈতিকতার অবক্ষয় একত্রিত হয়ে আমাদের সামনে একটি ভয়ঙ্কর প্রতিবিম্ব স্থাপন করছে।
পীযূষ হালদার: র্যাগিংয়ের অন্ধকার বাস্তবতা
গত মাসে এক কলেজের নবাগত ছাত্র পীযূষ হালদার, যে কলেজ জীবনকে আনন্দময় এবং স্মরণীয় করে গড়ার জন্য পা রেখেছিল, সিগ্নোমা হয়ে উঠলো একটি নির্মম কাহিনীর প্রতীক। দ্বিতীয় বর্ষের ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের এই ছাত্র সম্প্রতি মারাত্মক র্যাগিংয়ের শিকার হয়। এই ঘটনা শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের একটি বৃহত্তর সমস্যার একটি চিত্র তুলে ধরছে।
রাজনীতি ও র্যাগিং: একটি অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
র্যাগিংয়ের এই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু সদস্যের নাম সামনে এসেছে। অন্তত পাঁচজন ছাত্র, যারা নিজেদেরকে উন্নয়নের মুখ হিসেবে দাবি করছেন, তারা আদৌ নিজেদের মানবিকতা প্রদর্শন করতে পেরেছে কি? এই প্রশ্ন বর্তমানে শহরের চারপাশে গুঞ্জরণধর্মী। যারা ছাত্রদের জন্য প্রতিনিধিত্বের দাবি করেন, তাদের মধ্যে কি সত্যিই মানবিকতা অবশিষ্ট রয়েছে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিকতা ও পরিবর্তন
সামাজিক জনগণ এই ঘটনার দিকে কেবলমাত্র কূটাভাসের চোখে নয়, বরং গভীরতার সাথে নজর দিচ্ছে। এটি ছাত্র পরিবেশে অশান্তি ও ভয়ের লক্ষণ প্রকাশ করে। যেখানে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত বন্ধন এবং সূর্বরণ, সেখানে কি আমরা শুধুই ভয়ের এবং নির্যাতনের কাহিনী শুনতে চলেছি?
গণতন্ত্রের রক্তাক্ত কাহিনী: নির্যাতনের ইতিহাস
মারধরের এই ঘটনায় রাজনৈতিক পরিবেশ নতুন এক গতির মুখোমুখি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের পরিচিতি পুনর্মূল্যায়নের চেষ্টা করছেন। তবে সাধারণ জনগণের মনে উঠছে প্রশ্ন, তারা কি সত্যিই ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছেন, না কি নিজেদের ক্ষমতা বজায় রাখতে চান? ভয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই নৈতিকতার বিষয়টি জরুরি হয়ে উঠেছে।
মিডিয়ার ভূমিকা: দর্শকের দৃষ্টিকোণ
মিডিয়া এই ঘটনার খবরকে একজন ট্যাবলয়েড স্ক্যান্ডালে পরিণত করেছে। একটি দিকে “নেতাদের কাহিনী”, অন্যদিকে “ছাত্রদের মর্যাদা”—এগুলো যেন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। সামাজিক নেটওয়ার্কে এই বিষয়ে চিত্কারের ঝড় বয়ে চললেও, কি সেই আওয়াজ প্রকৃত পরিবর্তন নিয়ে আসবে?
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা
পীযূষের ঘটনা আমাদের নতুন করে ভাবার আহ্বান জানাচ্ছে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে পারে। তারা যেন নিজেদেরকে মূল্যায়ন করতে এবং নিজেদের পথে হাঁটতে শিখতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য কী হবে? আমরা কি শুধুমাত্র কথার পক্ষে থাকবো, না কি সঠিক ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করবো?